মেয়েটা ফিসফিস করে আমাকে কিছু একটা বলতে
চাইলো। কিন্তু তার গলা থেকে কোন আওয়াজ
বেরোচ্ছে না। প্রচন্ড ঠান্ডায় তার গলা বসে গেছে। ঐ মূহুর্তে দিনে তিন বেলা
আইসক্রিম খাওয়া নিয়ে তাকে একটা বিশদ লেকচার দেয়া উচিত। কিন্তু তার চোখের দিকে
তাকিয়ে আমার কেন জানি মায়া লাগলো।
জ্বর
বড্ড খারাপ জিনিস। তীব্র সুন্দর একজোড়া চোখও জ্বরের সাথে যুদ্ধ করে হার মেনে যায়।
সেই চোখজোড়াতে ভর করে রাজ্যের ক্লান্তি। মেয়েটা চোখ বন্ধ করলো। হু হু করে তার জ্বর
বাড়ছে। আমি একটা ভেজা রুমাল হাতে নিয়ে মেয়েটার কপালে রাখলাম। মেয়েটা জানে না,
রুমালের রং নীল জানলে সে খুব রেগে যেতো।
নীল রং মেয়েটার পছন্দ না।
সপ্তাহখানেক
ধরেই প্রতিদিন ঘন্টাখানেক পর পর আমি মেয়েটার জ্বরের খোঁজ নিতাম। হয়তো সে বিরক্ত
হতো, হয়তো হতো না! আমার অত কিছু ভাবার সময় ছিল না। আমার ভালো লাগতো। খোঁজ না নিতে
পারলে আমার কষ্ট হতো। আমি নিজের কষ্ট কমাতেই বোধ হয় ওর খোঁজ নিতাম।
অনুভূতির
বেলায় মানুষ খুবই স্বার্থপর। নিজের ভালোলাগার দিকেই সে দৌড়াতে থাকে।
আমি ডাক্তার নই, কিন্তু আমি জানি, এই পৃথিবীতে সব রকম অসুস্থতার একটাই ঔষধ
আছে। ঔষধের নাম 'CARE' গভীর রাতে জ্বরের সাথে যুদ্ধ করে
প্যারাসিটামলের হেরে যাওয়ার দুঃখের গল্পটায় হুট করে CARE এসে হাজির হয়ে গল্পের হ্যাপি এন্ডিং টেনে আনে।
কিছুদিনের
মধ্যেই মেয়েটার জ্বর ভালো হয়ে গেলো। ব্যাপারটাতে আমার খুশি হওয়া উচিত, কিন্তু কেন
জানি আমি খুশি হতে পারছি না। তীব্র জ্বর আমাকে যে অদৃশ্য অধিকারটুকু দিয়েছিল, আজ
সেই অধিকারটুকু হুট করে চলে গেলো।
এখন আমার জন্য CARE এর দরজাটা বন্ধ হয়ে গেছে। আমার কেমন
জানি শূন্য শূন্য লাগতে থাকে। কি অদ্ভূত আমি। কি ভয়ংকর স্বার্থপর আমি।
অসময়ের
বৃষ্টিতে ভিজে কোন এক রাতে আমার ভয়ংকর জ্বর আসে, ঘুমের ঘোরে আমি দেখতে পাই দুটো
শব্দ ভেসে উঠছেঃ
"কেমন আছো
??"
আমি
কাঁপা কাঁপা হাতে লিখতে চেয়েছিলামঃ
"আমি ভালো
নেই। আমি ভালো নেই"
জ্বরে
কাঁপতে কাঁপতে আমি ঘুমিয়ে যাই। জ্বরের ঘোরে আমি বারবার একটা মুখ দেখতে থাকি।
কৃষ্ণচূড়ার মত রক্তিম আভা ছিল তার ঠোঁটে। কপালের লাল রঙা টিপ কেন জানি এক পাশে সরে
গেছে। আমি হাত বাড়াতে চাইলাম। আমি দেখলাম, আমার খুব কাছে একটা মায়াময় মুখ কেন জানি
লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।
আমি হাত
বাড়ালাম কিন্তু ছুঁতে পারলাম না। চোখ বুঝলে মানুষটা আমার যতটা কাছে, চোখ খুললে
মানুষটা ঠিক ততটাই দূরে।
প্রায়
বছরখানেক পর কোন এক রাতে লাল শাড়ি, লাল টিপ, লাল লিপস্টিক দেয়া এই মুখটাকে সত্যি
সত্যি দেখি। আমার চোখের একদম সামনে সে বসে
আছে। লজ্জায় তার গাল আর নাক লাল হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা, বিয়ের সাজে সব মেয়েকেই বোধ হয়
রূপবতী লাগে, না!??
আমি চোখ
বুজতেই টের পেলাম। আমার ভেতরটাতে কেমন জানি একটা চাপা কষ্ট ছড়িয়ে আছে। কেমন জানি
একটা নাম না জানা বেদনা !!
কষ্টের
রং নীল, বেদনার রং নীল, আমার রং ও বোধহয় নীল। নীল রং মেয়েটার পছন্দ না, একদম পছন্দ
না।!!
Comments
Post a Comment