অকূল দরিয়ায় অসহায় ৪ যুবকস!

আমি, ফাহিম এবং ফুয়াদ- এই তিন যুবকের একই ধরণের দুঃখ।
আমাদের গোটা জীবন ব্যর্থ । আমরা কিছুই হতে পারিনি, কিছু হতে পারবোও না।
আমাদের অর্থ নেই, বিত্ত নেই, যশ নেই, খ্যাতি নেই, কষ্টের সময় মাথা রাখার মতো কোনো কোমল বুক নেই, বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, ব্যাংক - কিছুই নেই।
শুধু একরাশ হতাশা।
এই দুঃখে আমরা ঠিক করলাম, ঘর, সংসার ছেড়ে সন্ন্যাসী হবো।
দুচোখ যেদিকে যায়, সেদিকেই চলে যাবো, আর ফিরবো।
''তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিব না,
কোলাহল করে সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙিব না।''
এই মানসে এক কাপড়ে তিনজন ঘর থেকে বেরিয়ে হাঁটা দিলাম। বেশিদূর আগানো হলো না, কারওয়ান বাজারের মোড়ে এসে হাপিয়ে পড়লাম।
সেই সময় আমাদের শিল্পপতি বন্ধু রাকিব তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। বললেন, ঢাকা ছেড়ে দূরে কোথাও আপনাদের ছেড়ে দিয়ে আসি, তারপর যেখানে খুশি যাইয়েন। আসেন, গাড়িতে উঠেন।
সরল বিশ্বাসে গাড়িতে উঠলাম। গাবতলিতে এসে সিমু বলল, প্রত্যেকে ২০০০ টাকা করে দ্যান, ত্যাল কিনতে হবে। দিলাম।
সাভারে এসে সিমু জনপ্রতি আরও ১০০০ টাকা নিলো, গাড়ির চাকা রিপেয়ার করার কথা বলে। সেটিও দিলাম।
পথে খাবারের কথা বলে আরও ৫০০ টাকা করে নিলো।
শেষমেষ একটা অচেনা, গহীন এলাকায় গাড়ি ভিড়ল। সামনে নদী ছাড়া কিছু নেই।
নদীর সামনে এসে সিমু বললো, জিন্স, প্যান্ট পড়ে কি আর সন্ন্যাসী হওয়া যায়। জামা কাপড় কিছু আনছেন? ওর মধ্যে লুঙ্গি আছে?
নাঙা গা, পরণে লু্ঙি। নদীতে নামলাম। কালীগঙ্গা নদী। অসম্ভব চোরা স্রোত।
আমাদের প্ল্যান, নদী পার হয়ে জঙ্গলে ঢুকে পড়বো।
খোরস্রোতা নদী সাঁতরে ওপারে যাবার প্রাক্কালে প্রথমে আমার, তারপর ফাহিম-সবশেষে রাকিব এবং ফুয়াদের লুঙ্গি স্রোতে ভেসে গেল।
আমরা একবুক গলা পানিতে অসহায় দাঁড়িয়ে রইলাম।
না পারি এপারে আসতে , না যেতে পারি ওপারে।
অকুল দরিয়ায় অসহায় ৪ যুবক।
ছবি দেবো?

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখ করো না, বাঁচো !

এক টুকরো আকাশ !