“ইন্ডিয়া বিদেশ!”- তাহীম ত্বহা।


ফাইয়াজ আমাকে বলল, একটা জিনিস খেয়াল করে দেখছিস মামা?

জীবনটা কেমন যেন পানসে হয়ে গেছে।

আল্লাহর কসম, এই কথা শোনার আগ পর্যন্ত আমার জীবন যথেষ্ট ''রঙিলাই'' ছিল। কিন্তু ফাইয়াজের মতো জ্ঞানী মানুষ না জেনে কিছু বলে না। সে যখন বলেছে, জীবন পানসে , তার মানে জীবনে অবশ্যই কোনো না কোনো গলদ আছে।ওর কথা শুনে, আমি জীবন নিয়ে পুরো দুই মিনিট ভাবলাম। এবং ঠিক তিন মিনিটের মাথায় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে, জীবন আসলেই পানি পানি। ভাগ্যিস ফাইয়াজ ধরিয়ে দিয়েছিলো। নইলে মরার আগ পর্যন্ত, আমি ব্যাপারটা ধরতেই পারতাম না।

আবেগ আর টিয়ার গ্যাসের মধ্যে কিছুটা মিল আছে। এর পরিমাণ বেশি হলে, আমার চোখে পানি চলে আসে। হিচকা দিয়ে কান্না পায়। আমি কাঁদতে কাঁদতে ফাইয়াজকে জড়িয়ে ধরলাম।

ফাইয়াজ সাহেব অত্যন্ত বিরক্ত হলেন। জ্ঞানী মানুষেরা অতি অল্পে বিরক্ত হোন। এটা তাদের সৌন্দর্য। তবু কোনো রকমে বিরক্তি চেপে তিনি বললেন, এইসব ঢং বাদ দে তো। একটা আইডিয়া বের কর, কী করা যায়। একটা ব্রেক দরকার। ছোটখাটো ব্রেক না। হার্ড ব্রেক।

আমি পুরা একমাস ভাবলাম। কীভাবে জীবনে ''হার্ড ব্রেক'' আনা যায়। একদিন মাঝরাত্রে ফাইয়াজকে ফোন দিয়ে বললাম, চল, সবাই মিলে ইন্ডিয়া ঘুরে আসি। কলকাতায় যাবো, ঘুরবো, ফিরবো। হারানো সুখ আবার ফিরে আসবে।

ফাইয়াজ অত্যন্ত বিরক্ত হলো। এই তোর হার্ড ব্রেকের আইডিয়া। তুই তো ''আউট অব দি বক্স'' কোনো চিন্তাই করতে পারিস না। তাছাড়া এখন দেশের বাইরে যাওয়া সম্ভব না। আমার বউয়ের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

আমার বাসায় গ্রামীন ফোনের নেটওয়ার্ক মাঝে মাঝে ড্রপ করে। কাজেই আমি যা শুনলাম, সেটা মোটেও শোভন কিছু না। আঁতকে উঠে বললাম, কী বলিস এসব? তোর বউয়ের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে মানে?

ফাইয়াজ সিরিয়াসলি রেগে গেলো। বলল, আমার বউয়ের মেয়াদ কেন শেষ হবে. গাধার বাচ্চা? পাপী চিন্তা ছাড়া কোনো সুস্থ স্বাভাবিক চিন্তা কি তোর মাথায় খেলে না? পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, আমার বউয়ের না। আমার বউ ঠিক আছে।

যাক। শুনে আমি অত্যন্ত আশ্বস্ত হলাম।

এটা আজ থেকে দশ বছর আগের কাহিনী। তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ২১ কি ২২। ভরা যৌবণ যাকে বলে। এই বয়সে সুকান্ত ভট্টাচার্য কবি হয়ে উঠেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ কালজয়ী সব সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। ওইদিকে কবি হেলাল হাফিজ বলছেন অন্যকথা, এখন যৌবণ যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।

আমি আমার ভরা যৌবণ নিয়ে যুদ্ধ কিংবা কবিতা , কোনো দিকেই ঝাঁপালাম না। যৌবণের পুরোটা নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। ফাইয়াজ পত্নীর পাসপোর্ট পুরো পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন করে ফেললাম।

এরই মধ্যে সব বন্ধুবান্ধবকে ইন্ডিয়া বেড়ানো যাবার প্রস্তাব দেয়া হয়ে গেছে। সবাই রীতিমতো দুই পায়ে খাড়া। এক পা নিজের, আরেক পা তাদের বউদের। ব্যতিক্রম জুয়েল এবং সানি। তাদের বউ নেই। কাজেই তারা এক পায়ে দাঁড়িয়ে আমাকে সমর্থন দিলো।

আরেকটি বিচিত্র বিষয় এ সময় আবিষ্কার করলাম। সবার বউয়েরই ''পাসপোর্টের '' মেয়াদ শেষ। খুবই এলার্মিং ব্যাপার। যেহেতু ফাইয়াজ পত্নীর পাসপোর্ট আমি অত্যন্ত সফলতার সাথে নবায়ন করেছি, কাজেই আমার উপর একটা গুরু দায়িত্ব পড়লো- সবার বউয়ের ''পাসপোর্ট'' ''রিনিউ'' করার। ( পাসপোর্ট এবং রিনিউ- এই দুটো শব্দের উপর ইচ্ছে করে উর্ধ্ধকমা ব্যবহার করলাম, যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি না হয়।)

এর পরিণতি হলো ভয়াবহ।

সবশেষে শামীমের বউকে নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে গেছি। এর আগে আরও নয়টি বউয়ের কেস ডিল করছি। এটা দশম কেস। শামীম পত্নীর পাসপোর্ট রিনিউয়ের কাজ প্রায় শেষ, এমন সময় এক ভদ্রলোক এসে আমাকে ফিসফিস করে বললেন, ভাই কি খালি মাইয়া মাইনসের কাজ করেন? নাকি ব্যাটাগো কাজও কইরা দ্যান। বহুত দালাল দেখছি, আপনার মতো লেডিস দালাল দেখি নাই। হে হে হে।

বড় কাজে অপমান আসে। আমি এই অপমান মেনে নিলাম।

যাই হোক। এর পরের কাহিনী আরও করুণ। সবার পাসপোর্টের ঝামেলা শেষ হবার পর আরামে ঘুম দিয়েছি। একটু দম নেয়া দরকার। এখন ভিসাযুদ্ধে নামতে হবে। এরই মধ্যে সানির ফোন। সে কাঁদো কাঁদো গলায় জানালো, ভাই রে, মাল তো ভাগছে।

মাল তো সব ভাগছে, এই বাক্যটির বঙ্গানুবাদ অত্যন্ত করুণ। আমার সব বন্ধু এবং বন্ধুপত্নী পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার একদিনের মাথায় ভিসা জোগাড় করে ব্যাংকক উড়াল মেরেছে। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। প্রথমত, ইন্ডিয়ার ভিসা অনেক ঝামেলার, তারা এই ঝামেলায় যেতে চায় না। দ্বিতীয়ত, জামাই বউদের জন্য ইন্ডিয়ার চাইতে ব্যাংকক জায়গাটা বেশি মজার।

এই পরিকল্পনা তারা নিজেরাই করেছে। আমাকে জড়ায় নাই কেননা তার আমার আর্থিক অবস্থা জানে। ব্যাংকক যাবার মতো টাকা আমার নেই। এই গোপন ষড়যন্ত্র থেকে জুয়েল এবং সানিকে বাদ দেয়া হয়েছে। যেহেতু তারা অবিবাহিত। অবিবাহিতদের জন্য ব্যাংকক খুব সুবিধার জায়গা না।

আমি দমে গেলাম না। ভারতের ভিসা জোগাড় করার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লাম।

২.

টিকেট কাটা হয়ে গেছে।

জয়া গোছগাছ শুরু করে দিয়েছে।

ঠিক সেই সময় আম্মু বলল, আচ্ছা, ইনডিয়ায় কি বুড়ো মানুষ যেতে পারে?

আম্মুর এই প্রশ্নে জয়া খুবই মজা পেলো। আগেকার দিনের মানুষরা যে কত কম জানে, এটা ভেবেই জয়া আনন্দিত। বাঙালির স্বভাব হচ্ছে, জ্ঞানহীনকে জ্ঞান দেয়া। কাজেই জয়া প্রবল উৎসাহে আম্মুকে বোঝাতে লাগলো, ইন্ডিয়ায় বুড়ো থুড়ো সবাই যেতে পারে। কেউ বেড়াতে যায়, কেউ চিকিৎসার জন্য যায়, কেউ যায় পড়তে। নানান রকম ভিসা আছে। টুরিস্ট ভিসা, মেডিকেল ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা।

জ্ঞান পেলে মানুষ আলোকিত হয়। সেই আলোর ছটায় তাদের মুখে আলাদা একটা দীপ্তি আসে। আমার মাতাজির মুখ দেখে মনে হলো না তিনি বিশেষ দীপ্তিত হয়েছেন। জয়া যত জ্ঞান দেয়, তার মুখ তত অন্ধকার হয়ে আসে।

শুকনো মুখে তিনি জয়াকে আরও কত অবান্তর প্রশ্ন শুধান।

পাঠকদের সুবিধার্থে পুত্রবধু আর শাশুড়ির কিছু স্যাম্পল সংলাপ তুলে দিচ্ছি।

আম্মু: আচ্ছা ইন্ডিয়ায় যেতে তো পাসপোর্ট লাগে? নাকি ওইটা ছাড়া যাওয়া যায়?

জয়া ( হাসিমুখে) : কি বলেন আম্মু। পাসপোর্ট হচ্ছে বিদেশে যাওয়ার একমাত্র পরিচয় পত্র। এটা ছাড়া আপনি নড়তে চড়তে পারবেন না।

আম্মু ( মুখ আগের তুলনায় আরও শুকনো।) : খালি পাসপোর্ট লাগে? ভিসা না কিসের কথা যেন শুনি?

জয়া ( আগের তুলনায় ৩ গুণ হাসি। আম্মুর জ্ঞানহীনতায় যারপরনাই আনন্দিত) : কি বলেন আম্মু। ভিসা না থাকলে, সবাই তো পাসপোর্ট নিয়েই বিদেশে দৌড় মারতো। ভিসাই হচ্ছে আসল। যে দেশে যেতে চান, ভিসা হচ্ছে সেই দেশের অনুমতিপত্র।

আম্মু ( এবার মুখ পুরোই অন্ধকার।) :: ইন্ডিয়া কি বিদেশ?

জয়া (অত্যন্ত বিজ্ঞ ভঙ্গিতে) :: পৃথিবীর সব দেশ বিদেশ। পৃথিবীতে একমাত্র দেশ বিদেশ না। সেটা হচ্ছে , বা-ং-লা-দে-শ।

জয়ার ঝলমলে মুখ দেখে কে বলবে, সে নিজেও কোনোদিন বিদেশে যায়নি। এটাই তার প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। এই উত্তেজনায় রাত্রে সে ঘুমাচ্ছে না। জমানো টাকা খরচ করে পার্লার থেকে ফেসিয়াল করে এসেছে, প্রথম বিদেশ ভ্রমণ বলে কথা।

কেবল আমার বুক ফেটে কান্না আসে।

আম্মুকে গিয়ে বলি, তুমি কি আমাদের সাথে যেতে চাও? আব্বুও কি যাবে?

আম্মু আঁতকে উঠলো। না , না এইসব কী কস। আমরা বুড়া হইয়া গেছি। আজ বাদে কাল মরুম। এখন কি আমাদের দেশ বিদেশ সাজে রে বাবা। তোরা ঘুইরা আয়। আমার তাতেই শান্তি।

এই ডায়লগ দেবার পর তাকে গোপনে চোখ মুছতে দেখা যায়।

বন্ধুপত্নীদের পাসপোর্ট রিনিউ করতে গিয়ে যৌবনের প্রায় পুরোটা শেষ করে ফেলেছি। খানিকটা বাকি ছিলো। সেই অবশিষ্ট যৌবন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। এবার রিনিউ নয়। আব্বু আম্মুর নতুন পাসপোর্ট করতে হবে।

সরকারি অফিসে টাকা ছাড়া কাজ হয় না, এই কথাটা সর্বাংশে ঠিক না। ছেলে বউ আর নাতনিদের সাথে দুই বুড়ো বুড়ি কলকাতায় যাবে, এটা শুনে সবাই বেশ খুশি। তারা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো। টাকা দিয়ে যে কাজ পারিনি, বিনা টাকায় সেই কাজ হয়ে গেলো। মাত্র চারদিনের মাথায় দুইজনই পাসপোর্ট পেয়ে গেলেন।

একটা ছোট্ট ঘটনা বলি, তাহলে বুঝবেন। লোকাল থানা থেকে পুলিশ বাসায় এসেছে। আব্বু আম্মুর ঠিকানা ভেরিফিকেশন করতে। যথারীতি তাকে চা পানি খাওয়ানো হলো। এরপর তাকে আমি খুব নিরবে আরও বেশি ''চা পানি'' খাওয়ার জন্য কিছু টাকা ধরিয়ে দিলাম। তিনি আঁতকে উঠলেন। ছি ছি, এইসব কী করেন। আপনার বাবার ফেসকাটিংটা ঠিক আমার বাবার মতো। উনি এইটটি থ্রি-তে মারা গেছেন।

এই কথাটা বলে পুলিশটা চোখ মুছলেন। তারপর একটা কান্ড করলেন।

আব্বুর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে বসলেন।

আমার পিতা অত্যন্ত নিরীহ ছাপোষা মানুষ। একজন ইউনিফর্ম পরা পুলিশ তাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেছেন, এই ধাক্কা তিনি নিতে পারলেন না। সেই রাতেই তার সুগার ফল করলো। যাকে বলে হাইপো। যমে মানুষের টানাটানি অবস্থা।

আমাকে অবশ্য পুরো ইনডিয়া ট্যুর প্লানে কিঞ্চিৎ কাটছাট করতে হলো। ইচ্ছে ছিলো দার্জিলিং যাবো। বাজেট বেড়ে যাওয়ায়, সেটা বাদ দিলাম।

আমার বাবা চারিদিকে ফোন দিতে লাগলেন। কে মতি? খবর কিছু শুনছোস? শোন, বয়স তো হয়ে গেছে, কবে মারা যাই, ঠিক নাই। সারাদিন আল্লাহ খোদা নিয়ে থাকি। এর মধ্যে রবি এক কান্ড করছে। আমাদের নিয়া সে ইনডিয়া যাবে। হ্যাঁ ইনডিয়া, দি গ্রেট ভারতবর্ষ, হা হা হা । আমার যাবার একদম ইচ্ছা যদিও ছিল না। তবে ছেলে যেহেতু বায়না করছে, কি আর করা। তোরা দোয়া করিস। তোর জন্য কিছু আনতে হইবো কিনা জানাইস। ইনডিয়ার ওষুধ নাকি খুব ভালো। লাগবো কিছু?

মতি হচ্ছে আমার বাবার দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই। আমাদের মতি কাকা। এই খবর পেয়ে উনি পরদিন একটা কাঁঠাল নিয়ে মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় চলে আসেন। বাসা ভরে যায় চাচা আর মামায়।

তবে কলকাতা যাবার বিষয়টা মোটেও সুখকর ছিল না। আম্মু প্রেশারের রোগী। আমরা বর্ডার ক্রস করে পেট্রাপোল থেকে বাসে উঠেছি। সেই বাস আমাদের কলকাতা নিয়ে যাবে। অর্ধেক রাস্তায় গিয়ে আমার মা চোখ মুখ উল্টে বাসের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। সাথে সাথে বাস থামানো হলো। বাসের হেলপার ছুটে গিয়ে কোথা থেকে এক বালতি পানি নিয়ে আসলো। নিজেই মা'র মাথায় ঢালতে লাগলো। পেছনের সিট থেকে ছুটে এলেন এক অপরুপা নারী। পরে জেনেছি, তার নাম অপর্ণা। কলকাতার মেয়ে, বালিগঞ্জে থাকেন। ঢাকায় বেড়াতে এসেছিলেন। উনি কমলা লেবুর কোয়া বের করে আম্মুর মুখে দিলেন। যদি গা গুলানো ভাবটা কমে।

শেষমেষ দুইটা ট্যাক্সি ঠিক করা হলো। বাসের লোকজনই আমাদের সেই ট্যাক্সিতে তুলে দিলেন। কলকাতায় , দি সিটি অব জয়ে, আমরা ঢুকলাম হলুদ সেই ট্যাক্সিতে চেপে।

এবার আমার বাবা মা'র কলকাতার দর্শনের একটা নমুনা দেই। আব্বু আম্মুকে নিয়ে গেছি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে। আমার অত্যন্ত প্রিয় জায়গা। আব্বু পুরাই মুগ্ধ। তিনি যখন উত্তেজনার শীর্ষে চলে যান, তখন তার ডায়বেটিস বেড়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর আমরা পিতা পুত্র দুইজনেই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ভেতর দৌড়াচ্ছি। আব্বুকে একবার ছোট বাথরুমে যেতেই হবে।

ফেরার পথে বেশ বড় ঝামেলায় পড়লাম। আম্মু কিছুতেই বাসে ফিরবেন না। তার মনে ভয় ঢুকে গেছে। তার কথা, দরকার হলে হাইটা যামু, বাসে না।

আমি বহু কষ্টে সবার জন্য প্লেনের টিকেটের ব্যবস্থা করলাম। আম্মু জয়াকে বলল, প্লেনের কি জানালা খোলা যায়?

যে বাহনের জানালা খোলা যায় না, সেটাতে মানুষ দম আটকে মারা যায় । এটাই উনার দৃঢ় বিশ্বাস।

শেষমেষ কলকাতার এক বাস ড্রাইভার বলল, দাদা, এটা কোনো ''শমশ্যা'' না। মাসিমাকে আমরা জানালা খোলা রেখেই ঢাকায় ''লিয়ে'' যাবো। মালপাতি একটু বেশি খর্চা হবে, তবে জার্নি হবে ''ফাশকেলাশ''।

বহু টাকা কবুল করে তিনি ''ফাশকেলাশ'' জার্নির ব্যবস্থা করলেন। একটা লক্কর মার্কা বাস। ড্রাইভারের পাশে একটা টুল পাতা। সেই টুল দড়ি দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় আটকানো। ড্রাইভারের জানালা খোলা যায়। আম্মুকে ড্রাইভারের পাশে বসিয়ে দেয়া হলো।

দৃশ্যটা আজও আমার চোখে ভাসে। বাস চলছে। খোলা জানালা দিয়ে প্রবল বাতাস আসছে। আম্মু ঘোমটা মাথায় বসে আছেন। বাতাসে তার ঘোমটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তবু তিনি একটুকুও বিরক্ত হচ্ছেন না। প্রাণপনে ঘোমটা আটকে বসে আছেন।

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখ করো না, বাঁচো !

এক টুকরো আকাশ !