ফকিরের রসত্ব

ফকির হয়ে সাহস এত, করব কী আজ তোরে;
করব গুলি, উড়বে খুলি, পাঠিয়ে দেবো গোরে!
নুন আনতে পান্তা ফুরায়, হারামজাদার জাত;
বামন হয়ে চাঁদের দিকে বাড়াস কেন হাত?
কাজের বেটির পুত্র হয়ে দেড়-দুবেলা খেয়ে,
ভালোবাসার সাহস দেখাস চৌধুরীদের মেয়ে!
এই ছোটলোক, জানিস কি তুই আমার মাসিক আয়?
কয়শো-হাজার কর্মচারী আমার পরে-খায়?
কয়েক পুরুষ খেলেও বসে শেষ হবে না ধন;
মুকুটবিহীন রাজা আমি, আমিই দেশের ডন।
ধনে-মানে আমার মতো রাষ্ট্রে আছে কজন?
তোদের মতো চাকর-বাকর আমার কয়েক ডজন।
ছয়টা বাঁদি আমার মেয়ের, সকাল-বিকাল সেবা;
কয়টা আছে টয়টা আমার— হিশাব রাখে কে বা!
জানিস কত খরচ করে আমার মেয়ে মাসে?
গাড়ির মডেল পালটে দিলে তবেই খানিক হাসে।
বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়ে করতে গেলে চিল,
খাওয়ার পরে শোধ করে সে লক্ষ টাকা বিল।
মাসের শেষে বিদেশ যাবে, বিদেশ থেকেই বাজার;
আমার মেয়ে রানির মেয়ে, আমার মেয়ে রাজার।
পারবি কি তুই কিনতে কভু একটা গাড়ির চাকা?
বংশ বেচেও পারবি দিতে মেকআপ কেনার টাকা?
রাখবি কোথায় আমার মেয়ে? আছে কি তোর কিছু?
কয় টাকাতে ছাড়বি, শুয়োর, আমার মেয়ের পিছু?
কে দিয়েছে সাহস তোকে ঢুকতে বাড়ির ভিতর?
কী আছে তোর? কী আছে তোর? হারামজাদা-ইতর!
— আমার উপর আস্থা রাখেন, এবার থামান বলা;
গরম মাথা ঠান্ডা করেন, ছিঁড়বে না হয় গলা!
মারেন যদি, মারতে পারেন, যাবই নাহয় মরে;
রাখতে পারি জীবন বাজি ভালোবাসার জোরে।
আমরা হলাম চাকর-নফর, আপনি নাহয় মালিক;
আপনি হলেন বিরাট ইগল, আমরা নাহয় শালিক।
আজকে আমি গরিব বলে দিলেন যত গালি;
খতিয়ে দেখে বিচার হবে, হিশাব রাখেন খালি।
আপনি আমার শ্বশুর হবেন, বাজান এবার সানাই;
আমার কাছে কী আছে তা, আসুন এবার জানাই।
হয়তো আমি গরিব, তবু, শুনুন বলি কী আজ—
আমার বাড়ির রান্নাঘরে বিশটা আছে পিঁয়াজ!

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখ করো না, বাঁচো !

এক টুকরো আকাশ !