প্রিয় আনিসুল হক!
আনিসুল হকের একটি বিশেষ প্রতিভা নিয়ে কাউকে কথা বলতে দেখলাম না। এই প্রতিভাকে বলে, কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট। দুইটা দল ঝগড়া করছে, তাদেরকে মিলমিশ করিয়ে দিতে তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন।
এই রকম দুটি বড় ঘটনা দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিলো। ব্যান্ডসঙ্গীত তখন সবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। এই নতুন ধারার গান শুনে তরুণরা আত্নহারা। কিন্তু প্রবীণের মাথা ঝাঁকিয়ে বলছেন, গেলো গেলো, সব গেলো।
আনিসুল একটি অভাবনীয় ব্যাপার ঘটালেন। টিভিতে একটি গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো। যারা ইস্ত্রি করা পাঞ্জাবি পড়ে, পবিত্র শান্তিনিকেতনীয় ভাব নিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীতসহ গেয়ে থাকেন, তাদেরকে তিনি ডাকলেন। আরেকদল আমন্ত্রণ পেলো। ঝাকড়া চুলের সানগ্লাস পড়া ব্যান্ডের গাতক-গাতিকাবৃন্দ। দুই দল পাশাপাশি বসে গানবাজনা করলো। মজার যেটা ব্যাপার ঘটলো, রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পীরা গাইলেন ব্যান্ডের গান। আর ব্যান্ডের ছোকড়ারা হারমোনিয়াম বাজিয়ে গাইলো রবীন্দ্রসঙ্গীত। এই আয়োজনের নাম দেয়া হলো- জলসা। অভূতপূর্ব এই অনুষ্ঠান দেখার পর দুই দলই খুবই সহজে বুঝে ফেললো, সুরের কোনো দল নেই। অহেতুক দলাদলি ব্যাপারটা কেবল মানবজাতির জন্য প্রযোজ্য।
আরেকটি কান্ড তিনি করেছিলেন। তখন আওয়ামীলীগ বিএনপির বিরোধ এখনকার মতোই চরমে। পার্থক্য হচ্ছে, সে সময় দুই দলই সমান শক্তিশালী। একদল ক্ষমতায় থাকলে আরেক দল থাকে রাজপথে। দেশ অচল করে দেয়। ভয়ংকর অবস্থা। একদল সরকার চালায়, আরেক দলের কথায় চলে রাজপথ।
তখন ব্যবসায়ীদের প্রভাবশালী সংগঠন বিজিএমই অথবা এফবিসিসিআইয়ে বাৎসরিক অনুষ্ঠান হবে। আনিসুল হক সেই অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করলেন। যেহেতু ব্যবসায়ীদের অনুষ্ঠান, কাজেই দুই দলের লোকজনই সেই অনুষ্ঠানে যাবেন। আমাদের রাজনীতিবিদরা একটু বিচিত্র। দুই দল একসাথে সংসদে বসেন না, কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাওয়াতে দলমত নির্বিশেষে যোগ দেন। হক সাহেব এই সুযোগটিকে কাজে লাগালেন। তিনি পুরো সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট অন্যভাবে করলেন।
দেখা গেলো, টেবিলে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের ঠিক পাশের চেয়ারেই বসতে হচ্ছে বিএনপির সম্পাদককে। বিএনপির প্রচার সম্পাদকের পাশের চেয়ারে সিট পড়েছে একই পদে থাকা আওয়ামী নেতার। সে এক দেখার মতো দৃশ্য।
শুধু তাই নয়। এই ডিনার পার্টিতে কিছু বিনোদনমূলক খেলার আয়োজন করলেন। গেমসগুলো এমন যে আওয়ামীলীগের একজন সদস্যকে দুষ্টমির ছলে বিএনপির একজনের সাথে গিয়ে খেলতে হবে।
এই আয়োজনের ফলে দেশের সাধারণ মানুষ একটা বিরল দৃশ্য দেখার সুযোগ পেলো। সংসদে যাদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ, তারা শান্তিপূর্ণভাবে খাওয়া দাওয়া এবং হাসি তামাশা করছেন।
টিভি উপস্থাপক হিসেবে নয়, বরং টিভির অনুষ্ঠানের আইডিয়ার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন ইতিহাসের সফলতম মানুষ। বাংলাদেশের হুমায়ূন ফরিদীকে তিনি নিয়ে গেলেন বোম্বের দিলীপ কুমারের সামনে। দুই মহান শিল্পী কিছুক্ষণ আড্ডা মারলেন।
হুমায়ূন আহমেদ এবং গুলতেকিনকে ডাকলেন ঈদের আনন্দমেলায়। মঞ্চে স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি বসে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন।
উপস্থাপক আনিসুল হক বললেন, শুনেছি লেখকরা নিজের স্ত্রীর ব্যাপারে খুব অমনোযোগী হোন। আচ্ছা হুমায়ুন, আপনি বলেন তো গুলতেকিন আজ কী রঙয়ের শাড়ি পড়েছেন?
হুমায়ূন আহমেদ উত্তর দিলেন, আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করতে চাচ্ছেন তো? এটা বোধহয় পারবেন না। আমার স্ত্রী কী রঙয়ের শাড়ি পড়েছে, এটা তো আমি জানিই, এমনকি তার ভ্যানিটি ব্যাগে কি রঙয়ের রুমাল আছে, সেটাও জানি। রুমালের রঙ গোলাপি।
হতভম্ব গুলতেকিন তার ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে দেখালেন, সত্যি সত্যি সেখানে গোলাপী রঙয়ের রুমাল রয়েছে।
দর্শকরা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লো।
বেশি বুদ্ধিমান মানুষরা সাধারণত পরিশ্রমী হোন না। আনিসুল হক তুখোড় বুদ্ধিমান হয়েও দারুন সংগ্রামী ছিলেন। এ কারণেই তিনি খুব সামান্য অবস্থা থেকে শীর্ষ ধনীতে পরিণত হয়েছিলেন। বেশ অল্প সময়ে। আবার ধনবান ব্যক্তিরা সাধারণত রুচিবান হোন না। আনিসুল হকের রুচি ছিলো অসম্ভব পরিশীলিত এবং আধুনিক।
জীবনের পরিণত লগ্নে এসে তিনি মেয়র নির্বাচনে নামলেন। খুবই অস্বস্তি নিয়ে বলছি, একজন আধুনিক, স্মার্ট, রুচিশীল এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বকে পাবলিক ঠিক পছন্দ করলো না। তিনি কোনোক্রমে নির্বাচিত হলেন বটে।
ভোটের সময় বাঙালি খুবই বিচিত্র আচরণ করে। এ আচরণ ব্যাখাতীত। অনেক মুনীঋষি এটার রহস্যভেদ করতে চেয়েছেন, আজ অবধি কেউ পেরেছে বলে শুনিনি। যাই হোক, সেটা অন্য আলোচনা।
মেয়র হিসেবে কেবল নয়, সব ক্ষমতাবান নেতাদের মধ্যে আনিসুল হক ছিলেন সফলতম। সীমিত ক্ষমতার মেয়র হয়ে তেজগাও ট্রাক স্ট্যান্ড যেভাবে তিনি উচ্ছেদ করেছেন, সেটা অতুলনীয়। যারা বাংলাদেশের রাজনীতি এবং আমলাতন্ত্র বোঝেন, তারা জানেন, এটা কতখানি অসম্ভব কাজ। খুব সম্ভবত ঢাকাকে তিনি অন্য চেহারা দিতে পারতেন। মেয়র হিসেবে তাকে পুরো ক্ষমতা দেয়া হলে, পুরো ঢাকাকে তিনি সত্যিই বদলে দিতে পারতেন।
যারা চমকে উঠছেন, তাদেরকে একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই। মেয়র চাইলেই মশা মারতে পারেন না। মশা থাকে ডোবায়। সেই ডোবার মালিক মেয়র নন, ঢাকা ওয়াসা। চাইলেই রাস্তা বড় করতে মেয়র পারেন না। রাস্তার মালিক সড়ক ও জনপথ বিভাগ। মোট কথা, মেয়র পদটি অনেকখানিই আনুষ্ঠানিক তবু এই পদে থেকে তিনি ভেলকি দেখিয়েছেন। বিদেশী এম্বেসিগুলোর দেয়ালেও হাত দিয়েছেন। এই সাহস অন্য কেউ করতো না। গাটস ছিলো ভদ্রলোকের।
যাই হোক, আনিসুল হকের মৃত্যুও বেশ নাটকীয়। তার মৃত্যুকে ঘিরে নোংরা সাংবাদিকতার কিছু নমুনা আমাদেরকে দেখতে হয়েছে। সংবাদ মাধ্যম গত কয়েক মাসে কতবার যে এই মেয়রের মৃত্যু সংবাদ প্রচার করেছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
কাজেই অদ্যকার সত্য সংবাদটি বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছে। বার বার মন চাইছিলো, এটাও যেন গুজব হয়। পরিশেষে বেদনাবিধুর চিত্তে মনে হয়েছে, এবার গুজবটা কেন যে সত্যি হলো।
তার মৃত্যু আরও কিছু অকথ্য গুজবের অবসান ঘটিয়েছি। এটাও ভীষণ তাৎপর্যপূণ।
এবার ঢাকার হাল কে ধরবেন? মেয়রের জন্য নির্বাচন কি হবে? জাতীয় নির্বাচনের আগে সেই ইলেকশন কেমন হবে? নাকি নির্বাচনহীন প্রশাসক বসবেন মেয়রের চেয়ারে?
এসব প্রশ্ন দূরে ঠেলে, আপাতত বলি, মানুষের ভালোবাসার চাইতে বড়ো দোয়া আর নেই। মানুষকে কাঁদাতে হলে কাজ করতে হবে। সত্যিকারের কাজ। মানুষ কাজটাই মনে রাখে, বক্তৃতা নয়। আজকের ফেসবুক দেখে তাই মনে হচ্ছে বার বার।
ওপারে ভালো থাকুন, আনিসুল হক। যে আনন্দ আপনি মানুষকে বিলিয়েছেন, সেটা শতগুণে ফিরে আসুক আপনার নবযাত্রায়।
এই রকম দুটি বড় ঘটনা দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিলো। ব্যান্ডসঙ্গীত তখন সবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। এই নতুন ধারার গান শুনে তরুণরা আত্নহারা। কিন্তু প্রবীণের মাথা ঝাঁকিয়ে বলছেন, গেলো গেলো, সব গেলো।
আনিসুল একটি অভাবনীয় ব্যাপার ঘটালেন। টিভিতে একটি গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো। যারা ইস্ত্রি করা পাঞ্জাবি পড়ে, পবিত্র শান্তিনিকেতনীয় ভাব নিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীতসহ গেয়ে থাকেন, তাদেরকে তিনি ডাকলেন। আরেকদল আমন্ত্রণ পেলো। ঝাকড়া চুলের সানগ্লাস পড়া ব্যান্ডের গাতক-গাতিকাবৃন্দ। দুই দল পাশাপাশি বসে গানবাজনা করলো। মজার যেটা ব্যাপার ঘটলো, রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পীরা গাইলেন ব্যান্ডের গান। আর ব্যান্ডের ছোকড়ারা হারমোনিয়াম বাজিয়ে গাইলো রবীন্দ্রসঙ্গীত। এই আয়োজনের নাম দেয়া হলো- জলসা। অভূতপূর্ব এই অনুষ্ঠান দেখার পর দুই দলই খুবই সহজে বুঝে ফেললো, সুরের কোনো দল নেই। অহেতুক দলাদলি ব্যাপারটা কেবল মানবজাতির জন্য প্রযোজ্য।
আরেকটি কান্ড তিনি করেছিলেন। তখন আওয়ামীলীগ বিএনপির বিরোধ এখনকার মতোই চরমে। পার্থক্য হচ্ছে, সে সময় দুই দলই সমান শক্তিশালী। একদল ক্ষমতায় থাকলে আরেক দল থাকে রাজপথে। দেশ অচল করে দেয়। ভয়ংকর অবস্থা। একদল সরকার চালায়, আরেক দলের কথায় চলে রাজপথ।
তখন ব্যবসায়ীদের প্রভাবশালী সংগঠন বিজিএমই অথবা এফবিসিসিআইয়ে বাৎসরিক অনুষ্ঠান হবে। আনিসুল হক সেই অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করলেন। যেহেতু ব্যবসায়ীদের অনুষ্ঠান, কাজেই দুই দলের লোকজনই সেই অনুষ্ঠানে যাবেন। আমাদের রাজনীতিবিদরা একটু বিচিত্র। দুই দল একসাথে সংসদে বসেন না, কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাওয়াতে দলমত নির্বিশেষে যোগ দেন। হক সাহেব এই সুযোগটিকে কাজে লাগালেন। তিনি পুরো সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট অন্যভাবে করলেন।
দেখা গেলো, টেবিলে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের ঠিক পাশের চেয়ারেই বসতে হচ্ছে বিএনপির সম্পাদককে। বিএনপির প্রচার সম্পাদকের পাশের চেয়ারে সিট পড়েছে একই পদে থাকা আওয়ামী নেতার। সে এক দেখার মতো দৃশ্য।
শুধু তাই নয়। এই ডিনার পার্টিতে কিছু বিনোদনমূলক খেলার আয়োজন করলেন। গেমসগুলো এমন যে আওয়ামীলীগের একজন সদস্যকে দুষ্টমির ছলে বিএনপির একজনের সাথে গিয়ে খেলতে হবে।
এই আয়োজনের ফলে দেশের সাধারণ মানুষ একটা বিরল দৃশ্য দেখার সুযোগ পেলো। সংসদে যাদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ, তারা শান্তিপূর্ণভাবে খাওয়া দাওয়া এবং হাসি তামাশা করছেন।
টিভি উপস্থাপক হিসেবে নয়, বরং টিভির অনুষ্ঠানের আইডিয়ার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন ইতিহাসের সফলতম মানুষ। বাংলাদেশের হুমায়ূন ফরিদীকে তিনি নিয়ে গেলেন বোম্বের দিলীপ কুমারের সামনে। দুই মহান শিল্পী কিছুক্ষণ আড্ডা মারলেন।
হুমায়ূন আহমেদ এবং গুলতেকিনকে ডাকলেন ঈদের আনন্দমেলায়। মঞ্চে স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি বসে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন।
উপস্থাপক আনিসুল হক বললেন, শুনেছি লেখকরা নিজের স্ত্রীর ব্যাপারে খুব অমনোযোগী হোন। আচ্ছা হুমায়ুন, আপনি বলেন তো গুলতেকিন আজ কী রঙয়ের শাড়ি পড়েছেন?
হুমায়ূন আহমেদ উত্তর দিলেন, আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করতে চাচ্ছেন তো? এটা বোধহয় পারবেন না। আমার স্ত্রী কী রঙয়ের শাড়ি পড়েছে, এটা তো আমি জানিই, এমনকি তার ভ্যানিটি ব্যাগে কি রঙয়ের রুমাল আছে, সেটাও জানি। রুমালের রঙ গোলাপি।
হতভম্ব গুলতেকিন তার ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে দেখালেন, সত্যি সত্যি সেখানে গোলাপী রঙয়ের রুমাল রয়েছে।
দর্শকরা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লো।
বেশি বুদ্ধিমান মানুষরা সাধারণত পরিশ্রমী হোন না। আনিসুল হক তুখোড় বুদ্ধিমান হয়েও দারুন সংগ্রামী ছিলেন। এ কারণেই তিনি খুব সামান্য অবস্থা থেকে শীর্ষ ধনীতে পরিণত হয়েছিলেন। বেশ অল্প সময়ে। আবার ধনবান ব্যক্তিরা সাধারণত রুচিবান হোন না। আনিসুল হকের রুচি ছিলো অসম্ভব পরিশীলিত এবং আধুনিক।
জীবনের পরিণত লগ্নে এসে তিনি মেয়র নির্বাচনে নামলেন। খুবই অস্বস্তি নিয়ে বলছি, একজন আধুনিক, স্মার্ট, রুচিশীল এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বকে পাবলিক ঠিক পছন্দ করলো না। তিনি কোনোক্রমে নির্বাচিত হলেন বটে।
ভোটের সময় বাঙালি খুবই বিচিত্র আচরণ করে। এ আচরণ ব্যাখাতীত। অনেক মুনীঋষি এটার রহস্যভেদ করতে চেয়েছেন, আজ অবধি কেউ পেরেছে বলে শুনিনি। যাই হোক, সেটা অন্য আলোচনা।
মেয়র হিসেবে কেবল নয়, সব ক্ষমতাবান নেতাদের মধ্যে আনিসুল হক ছিলেন সফলতম। সীমিত ক্ষমতার মেয়র হয়ে তেজগাও ট্রাক স্ট্যান্ড যেভাবে তিনি উচ্ছেদ করেছেন, সেটা অতুলনীয়। যারা বাংলাদেশের রাজনীতি এবং আমলাতন্ত্র বোঝেন, তারা জানেন, এটা কতখানি অসম্ভব কাজ। খুব সম্ভবত ঢাকাকে তিনি অন্য চেহারা দিতে পারতেন। মেয়র হিসেবে তাকে পুরো ক্ষমতা দেয়া হলে, পুরো ঢাকাকে তিনি সত্যিই বদলে দিতে পারতেন।
যারা চমকে উঠছেন, তাদেরকে একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই। মেয়র চাইলেই মশা মারতে পারেন না। মশা থাকে ডোবায়। সেই ডোবার মালিক মেয়র নন, ঢাকা ওয়াসা। চাইলেই রাস্তা বড় করতে মেয়র পারেন না। রাস্তার মালিক সড়ক ও জনপথ বিভাগ। মোট কথা, মেয়র পদটি অনেকখানিই আনুষ্ঠানিক তবু এই পদে থেকে তিনি ভেলকি দেখিয়েছেন। বিদেশী এম্বেসিগুলোর দেয়ালেও হাত দিয়েছেন। এই সাহস অন্য কেউ করতো না। গাটস ছিলো ভদ্রলোকের।
যাই হোক, আনিসুল হকের মৃত্যুও বেশ নাটকীয়। তার মৃত্যুকে ঘিরে নোংরা সাংবাদিকতার কিছু নমুনা আমাদেরকে দেখতে হয়েছে। সংবাদ মাধ্যম গত কয়েক মাসে কতবার যে এই মেয়রের মৃত্যু সংবাদ প্রচার করেছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
কাজেই অদ্যকার সত্য সংবাদটি বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছে। বার বার মন চাইছিলো, এটাও যেন গুজব হয়। পরিশেষে বেদনাবিধুর চিত্তে মনে হয়েছে, এবার গুজবটা কেন যে সত্যি হলো।
তার মৃত্যু আরও কিছু অকথ্য গুজবের অবসান ঘটিয়েছি। এটাও ভীষণ তাৎপর্যপূণ।
এবার ঢাকার হাল কে ধরবেন? মেয়রের জন্য নির্বাচন কি হবে? জাতীয় নির্বাচনের আগে সেই ইলেকশন কেমন হবে? নাকি নির্বাচনহীন প্রশাসক বসবেন মেয়রের চেয়ারে?
এসব প্রশ্ন দূরে ঠেলে, আপাতত বলি, মানুষের ভালোবাসার চাইতে বড়ো দোয়া আর নেই। মানুষকে কাঁদাতে হলে কাজ করতে হবে। সত্যিকারের কাজ। মানুষ কাজটাই মনে রাখে, বক্তৃতা নয়। আজকের ফেসবুক দেখে তাই মনে হচ্ছে বার বার।
ওপারে ভালো থাকুন, আনিসুল হক। যে আনন্দ আপনি মানুষকে বিলিয়েছেন, সেটা শতগুণে ফিরে আসুক আপনার নবযাত্রায়।
Comments
Post a Comment