Posts

Showing posts from January, 2018

কোলকাতা !

পর্ব ১ একবার দারুন বিপদে পড়েছিলাম। বোম্বে থেকে ট্রেনে উঠেছি। কলকাতা যাবো। ট্রেনের নাম হাওড়া এক্সপ্রেস। বেশ সস্তার ট্রেন। মোটামুটি দিন দুয়েক ট্রেনেই থাকতে হবে। ট্রেনে ওঠার পর আমার পাশের সিটে বসেছেন, কলকাতার এক দাদা। মোটামুটি মস্তান টাইপের মানুষ। ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ পর, তিনি বললেন, এই তোমার চপ্পলখানা দাও দিকিন। একটু টাট্টিখানায় যাবো। এই বলে সেই ভদ্রলোক আমার স্যান্ডেল নিলেন। বেশ ভালো স্যান্ডেল । বাটা কোম্পানির। ওমা। সেই লোক আর স্যান্ডেল দেয় না। স্যান্ডেল পরে হাঁটে, অন্য কামরায় যায়। ঘোরাঘুরি শেষে সেই স্যান্ডেল সিটের তলায় নিয়ে শুয়ে থাকেন। বিদেশ বিভুই জায়গা। সাহস করে কিছু বলতে পারি না। একবার ক্ষীণ গলায় বললাম, ও দাদা, স্যান্ডেলটা দেবেন। বাথরুমে যাবো। সে লোক ঝাড়ি মেরে বলল, আরে বোসো। তোমার চপ্পল তো আমি খেয়ে ফেলছি না। দোবো। এত অস্থির হচ্ছো কেন। ঝাড়ি খেয়ে আমি তবদা মেরে বসে আছি। পুরো কামরার লোকজন দেখছে। কেউ কিছু বলছে না। এমন সময় একটা ভীষণ কালো মতো লোক খুব ঠান্ডা গলায় হিন্দিতে কলকাতার দাদাকে একটি বাক্য বলল। হুবহু হিন্দি বাক্যটা বলতে পারবো না, শুধু মনে আছে, সে বলল, ওহে বান্দির পুত, এই বাবুর স...

"মায়াকান্না"

পৃথিবীর যে কোন মানুষ যদি তোমার সামনে কাঁদতে থাকে, তাহলে তার প্রতি তোমার একটু হলেও সিমপ্যাথি জাগবেই ... সমস্যাটা হলো, সেই মানুষটা যদি কাঁদার আগে এবং পরে তোমাকে বাজেভাবে আঘাত করে, তাহলে সেই কান্নার কোন মূল্য থাকে না!! "আর কখনো এমন করবো না" - নামক মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে মানুষটা বারবার একই কাজ করতে থাকে, তার কান্না দেখে একসময় আর মায়া লাগে না ... বরং ভন্ডামি বলে মনে হয় !! বারবার অনুরোধ করার পরেও যে মানুষটা তোমার সব অনুরোধকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তোমাকে আঘাত করার মত কাজ করে বসে, একসময় "ক্ষমা" ব্যাপারটা তার জন্য আসে না ... মন থেকে আসে না !! যে কাজটা তোমাকে কষ্ট দেয়, একটা মানুষ সেই কাজটা প্রথমবার যখন করে, সেটা তার "অনিচ্ছাকৃত ভুল" ... কাজটা সে দ্বিতীয়বার যখন করে, সেটা তার "ইচ্ছাকৃত ভুল" ... সেই একই কাজটা মানুষটা তৃতীয়বার যখন করে, সেটা তোমার জন্য তার পাঠানো একটা "মেসেজ" ... সেই মেসেজে লেখা থাকেঃ তুমি একটা ভীষণ রকমের বোকা ... বারবার তোমাকে আমি "ভুল" এর অজুহাতে কষ্ট দিয়ে দিয়ে ঠকাচ্ছি ... তারপর আমার কান্না দেখে বারবার তুমি বোকার মত আমা...

কাবিননামার কসম।

গতরাত ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বিভীষিকাময় রাত্রি। রাত দুইটার মতো বাজে। আমি ল্যাপটপে গভীর মনোনিবেশ সহকারে, দারুন দরকারি একটি কাজ করছি। আচমকা মাথার উপর পত পত শব্দ শুনে চমকে উঠলাম। উপরে তাকিয়ে আমার রক্ত হিম হয়ে গেলো। দেখি বিশালাকায় একটি কদাকার পাখি, খুব সম্ভবত ইগলই হবে, ডানা মেলে উড়ছে। এই সময় যেকোনো সাহসী বাঙালি পুরুষ যা করে, আমিও তাই করলাম। ও মাগো বলে চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠলাম। তারপর এক দৌড়ে বেডরুমে ঢুকে ঘুমন্ত স্ত্রীর কোলে ঝাপিয়ে পড়লাম। বৌ'নী চমকে উঠলো। কী হয়েছে তাহীম? আমি ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে বললাম, বৌ'নী ড্রয়িংরুমে একটা ভয়ংকর খেচর উড়ছে। ঈগল বা বাজপাখি কিছু একটা হবে। বাঁচাও বৌ'নী, বাঁচাও। পুলিশে ফোন দাও। দোয়া দুরুদ পড়ো। আমার স্ত্রী কিঞ্চিৎ মার্কিন বিরোধী। কাজেই খেকিয়ে বলল, এটা কি তোমার আমেরিকা পাইছো? খুলনা শহরে তুমি ইগল কোথায় পাবে? আমি ডুকরে কেঁদে উঠলাম। বললুম, বৌ'নী আমাদের কাবিননামার কসম। ওটা ঈগল কিংবা উঠপাখি কিছু একটা হবে। আমি নিজের চোখে দেখেছি। বিশ্বাস করো। খবরদার ওই ঘরে যেও না। শতকরা একশত ভাগ বাঙালি স্ত্রী যেমনটা হয়, আমার স্ত্রীও তার ব্যতিক্রম নন। তারা ভূত বি...

রাগ !

সপ্তাহখানেক আগের কোন এক মধ্যরাতের আমার কথায় বালিকা ভীষণ কষ্ট পেয়ে গিয়েছিল। আমি ওটা ভুলে করে মনের আক্ষেপ আর কষ্ট নিয়ে বলেছিলাম। আমি ব্যাপারটা ভুলে গেলেও, সে একদম ভুলে নি !! হাজারবার বলা SORRY তে তার মন গলে নি। কথা ছিল, আমাকে কান ধরতে হবে ... দুঃখজনকভাবে এটা কোন বহু নির্বাচনী প্রশ্ন না। এখানে আমার জন্য আর কোন অপশন ছিল না !! এত বড় হয়ে গেছি, এখন কান ধরা যায় নাকি ?? - কথাটা গলায় এসে আটকে গেলো। আমি দেখলাম, বালিকা তার বড় ফ্রেমের চশমা পরে আমাকে ইশারা দিলো কান ধরার জন্য !! আমার মনে হলো, আমি একটা স্কুলের নিরীহ শিশু। আমার চোখের সামনে রাগী মাস্টারনী বেত হাতে বসে আছে। নিজের অজান্তেই আমার দুই হাত আমার কান স্পর্শ করলো !! বালিকা যখন এমনিতে হাসে, তখন তাকে সুন্দর লাগে। অভিমানী বালিকা যখন ফিক করে হেসে দেয়, তখন তাকে ভয়ংকর সুন্দর লাগে। সুন্দর আর ভয়ংকর সুন্দর এর মাঝে অনেক পার্থক্য !! সুন্দর এর প্রতি মানুষের শুধু ভালোলাগা জন্মায়। ভয়ংকর সুন্দর এর প্রতি মানুষের ভালোবাসা জন্মায় !! আমি ফিসফিস করে বালিকাকে বললাম, "আমার চোখের দিকে তাকাও" বালিকা মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো। আমার ধারণা, সে এখন অন্যদি...

ঢাকা আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলা নামে আন্তর্জাতিক, কামে না।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলা নামে আন্তর্জাতিক , কামে আসলে ঢাকার নিউমার্কেটের মোবাইল ভার্সন। তবে এক জায়গায় তাঁরা আন্তর্জাতিক মানের। মানে খাবারের দামটা আন্তর্জাতিক মানের। ( মনেহয় তাঁরা ডলার বা পাউন্ডে বিল করে ) সেখানে হাজীর বিরিয়ানী , নান্নার বিরিয়ানী , স্টার কাবাব থেকে শুরু করে নাম করা অনেক দোকান দেখবেন যা ১০০ % ভুয়া। নিজেরা বিরানী বানায়া নাম দেয় হাজি / নান্নার বিরিয়ানি। দাম দেখবেন ১০০ টাকা , খাওয়ার পরে বিল ধরায়া দিবে ৬০০ - ৮০০ টাকা !!! বিল দিতে তেড়ি বেড়ি করবেন ফলাফল আপনার মোবাইল ঘড়ি   রাইখা দেয়া হবে / আপনার গ্রুপ একটু বড় হইলে তাগো আরো বড় গ্রুপ ডাইক্কা আইনা মাইর দেয়া হবে , আই মিন মগের মুল্লুক কি জিনিস তা বুঝায় শ্রেষ্ঠ জায়গা এটা। তবে এটা নতুন কিছু না , প্রতিবারই এমন হয়।   সো টাকায় যদি আপনারে না কামড়ায় তাইলে মাই সাজেশন মেলায় যান , ঘুরেন ঘারেন বাট যাওয়ার আগে ভালো মত খাইয়া যাইয়েন বা সাথে করে খাবার নিয়ে যাইয়েন। ঐখানে বাথরুমের ব্যাবস্থা আছে টেনশনের ক...

হৃৎপিণ্ডের কচুপাতা !

হৃৎপিণ্ডে আধেক মায়া, আধেক দেখি ছল; ছলাৎ-ছলাৎ ছিটকে পড়ে কচুপাতার জল। এই দেখি তো তুলতুলে সফট, আবার দেখি রকিং; ব্যাপারটা বেশ শকিং! কখন কিসে 'না' হয়ে যায়, কখন কিসে 'হ্যাঁ'? এই তো শুনি অট্টহাসি, এই তো শুনি 'ভ্যাঁ'! হঠাৎ দেখি পিন-সাইলেন্স, হঠাৎ টু-মাচ টকিং; ব্যাপারটা বেশ শকিং! কে জানে সে কখন জ্বলে, কখন সে যায় নিভে; কী জানি কী মগজে তার, কী জানি কী জিভে! হঠাৎ দেখি লাজুক তারে, হঠাৎ নিলাজ মকিং; ব্যাপারটা বেশ শকিং! একহাতে তার খণ্ডবরফ, আরেক হাতে পানি; বরফ-পানির হঠাৎ খেলায় দগ্ধ হৃদয়খানি! হঠাৎ কোথায় সুদূর হারায়, হঠাৎ দ্বারে নকিং; ব্যাপারটা বেশ শকিং! ব্যাপারটা কী শকিং, নারীহৃদয়ের কেমিস্ট্রি বোঝেননি খোদ হকিং!

তামাসা !

গতকালকে সারাদেশে রেকর্ড পরিমান শীত পড়ছে। উপয়ালার অশেষ রহমতে এই শীতে গরম কাপড় গায়ে জড়ানোর তৌফিক হইছে। আমার মত ফ্যান/এসিতে ঘামাইন্না পোলায়ও কড়া ঠান্ডায় সুইটার জ্যাকেট পিন্দা প্যাকেট হইয়া উম লইতাছিলাম। হঠাৎ বান্ধবীর মাথায় কোন ভুত চাপছে কে জানে, আমার সুখ উনার সহ্য হইলো না। আতকা আমার জ্যাকেটের হুডি টাইন্না পিঠের দিকে এক টুকরা বরফ ঢুকায় দিসে!!! আমি না পারতাছি একটানে জ্যাকেট খুলতে না পারতাছি বরফ বাহির করতে ঐদিকে সামনে দাঁড়ায় দাঁড়ায় আমার তামাসা দেইখা ওয় হিহি কইরা হাসতাছে!! বুশ লাদেনেরে সামনে পাইলেও তো মনেহয় এই শীতে গরম কাপড়ের ভিত্রে এরুম অমানবিক নির্যাতন করতো না দেশে নারী নির্যাতন আঈন আছে কিন্তু অবলা থুক্কু ‘অবল’ পুরুষ নির্যাতন আঈন নিয়া কারো কোন চিন্তা নাই। করবোডাও বা কে? উপরমহলের সকল হর্তা কর্তা সবই তো নারী। দুই দিনের দুনিয়ায় এক দিনের লাইজ্ঞাও পুরুষ সমাজেরে দেখার কেউ নাই। রাজীব ভাই এর মত নিশ্বাস ভারী করা ছাড়া আর কোন গতি দেখতাছি না। বিঃদ্রঃ নিশ্বাসঃ নির্যাতিত পুরুষ সংঘ।

বিয়ের রাতে যা যা করবো।

২০১৫ সালে আমি যখন এবি ব্যাংকের খুলনা ব্রাঞ্চে নিয়োগ হলাম। তখন আমার সব বন্ধুরা নর্দান ইউনিভির্সিটিতে পড়াশোনা করে। অনেক  অনেক বন্ধুর মাঝে সেখান থেকে আট দশ জন বন্ধুর সাথে বেশ খাতির হয় যায়। এর মধ্যে একটা বন্ধু প্রায় বিকেলেই আমার সঙ্গে আড্ডা দিতে আসত। আমার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমার জন্য অপেক্ষক করত। এরপর দুজনে মিলে চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়ে যে যার বাড়ি ফিরে যেতাম। দিন যত যেতে লাগলো আমাদের সম্পর্ক আরো মজবুত হতে লাগলো। ২০১৬ সালের দিকে আমার হঠাং বিয়ে করতে ইচ্ছা করে। পরের দিন অফিসে শেষ করে ওই বন্ধুর সঙ্গে চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছি। এমন সময় গল্পে গল্পে ওকে বললাম, - দোস্ত, আম্মুকে মেয়ে দেখতে বলছি। - কেন তুই কি সারাদিন কম মেয়ে দ্যাখোস নাকি (হা হা হা) - আরে বিয়ার জন্য ব্যাটা - এখন বিয়ে করবি ক্যান? এখন কি আটকায় যাওয়ার সময়? লাইফ থ্যাইকা মাস্তি তো উইড়া যাইবে ব্যাটা। - দোস্ত, আমি তো চাকরি করি আমার তো একটা বউ লাগে। - ধুর ব্যাটা, পারলে চার-পাঁচটা প্রেম কর একসঙ্গে কিন্তু বিয়া করিস না মামা। - আমি তো করতে চাই না, আম্মু দিতে চায়। আম্মুর বয়স হইছে। একা একা সময় কাটে না। চোখেও কম কম দেখে। মাঝে মাঝে ...

চন্দ্রনী!

তাহীমের অফিস দশ তলায়। পুরো বিল্ডিংয়ে মাত্র দুইটা লিফট। অফিস ছুটি হলে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় লিফটের জন্য। তাহীমের ধৈর্য্য কম। লিফটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা তার ঠিক পোষায় না। পুরো দশতলা সে সিঁড়ি বেয়ে নামে। যদিও সিঁড়ি বেয়ে নামাটা খুব সহজ কর্ম নয়। টাইলসের সিঁড়ি। খুবই পিচ্ছিল। কোনো এক বিচিত্র কারণে বাঙালি বাথরুম আর সিঁড়িতে টাইলস লাগাতে পছন্দ করে। সেই টাইলস হয় আয়নার মতো মসৃন। তাহীমের প্রায়ই মনে হয় তার মৃত্যু হবে সিঁড়িতে। মানুষ লিফট ছিঁড়ে মরে। সে মরবে সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়তে পড়তে। পত্রিকায় শিরোনাম হবে, সিঁড়ি দিয়ে পিছলে পড়ে নিহত ১। লোকজন সেই মৃত্যু সংবাদ পড়ে অনেক কষ্ট করে হাসি চেপে রাখবে। তাহীমের বংশে হাস্যকর মৃত্যুর রেকর্ড আছে। তার দূর সম্পর্কের এক চাচা মারা গিয়েছিলেন এইভাবে। তার মাথার উপর সিলিং ফ্যান খুলে পড়ে গিয়েছিলো। যদিও সেই সময় সিলিং ফ্যান চলছিলো না। তখন ছিলো মাঘ মাস। গ্রামের লোকেরা শীতের সময় সিলিংফ্যান পত্রিকা দিয়ে মুড়ে রাখে; যাতে ময়লা না পড়ে। তার চাচাও সেই কান্ড করেছিলেন। শীতের শুরুতে পত্রিকা আর টেপ দিয়ে যত্ন করে ফ্যান বেঁধে রেখেছিলেন। রাতে ঘুমাচ্ছিলেন। সেই পত্রিকামোড়ানো স্থবির ফ্...