বিয়ের রাতে যা যা করবো।

২০১৫ সালে আমি যখন এবি ব্যাংকের খুলনা ব্রাঞ্চে নিয়োগ হলাম। তখন আমার সব বন্ধুরা নর্দান ইউনিভির্সিটিতে পড়াশোনা করে। অনেক  অনেক বন্ধুর মাঝে সেখান থেকে আট দশ জন বন্ধুর সাথে বেশ খাতির হয় যায়। এর মধ্যে একটা বন্ধু প্রায় বিকেলেই আমার সঙ্গে আড্ডা দিতে আসত। আমার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমার জন্য অপেক্ষক করত। এরপর দুজনে মিলে চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়ে যে যার বাড়ি ফিরে যেতাম। দিন যত যেতে লাগলো আমাদের সম্পর্ক আরো মজবুত হতে লাগলো। ২০১৬ সালের দিকে আমার হঠাং বিয়ে করতে ইচ্ছা করে। পরের দিন অফিসে শেষ করে ওই বন্ধুর সঙ্গে চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছি। এমন সময় গল্পে গল্পে ওকে বললাম,
- দোস্ত, আম্মুকে মেয়ে দেখতে বলছি।
- কেন তুই কি সারাদিন কম মেয়ে দ্যাখোস নাকি (হা হা হা)
- আরে বিয়ার জন্য ব্যাটা
- এখন বিয়ে করবি ক্যান? এখন কি আটকায় যাওয়ার সময়? লাইফ থ্যাইকা মাস্তি তো উইড়া যাইবে ব্যাটা।
- দোস্ত, আমি তো চাকরি করি আমার তো একটা বউ লাগে।
- ধুর ব্যাটা, পারলে চার-পাঁচটা প্রেম কর একসঙ্গে কিন্তু বিয়া করিস না মামা।
- আমি তো করতে চাই না, আম্মু দিতে চায়। আম্মুর বয়স হইছে। একা একা সময় কাটে না। চোখেও কম কম দেখে। মাঝে মাঝে উল্টাপাল্টা বলে। মেজাজটাও সব সময় কিড়কিড়ে থাকে।
- ব্যস ব্যস, আর কইছ না। তোর মতো ফাউল আমি জীবনেও দেখি নাই। আন্টিরে নিয়ে এসব কছ? তোর উপর ঠাডা পড়ব।
-  ক্যান আমি আবার কি করলাম?
- আন্টিতো তোর থ্যাইকা ইয়াং। তুই মইরা ভূত হয়ে গেলেও, আন্টি বুড়ি হইব না।
- কী কইলি এটা?
- বিয়ে করলে আমার সাথে আর যোগাযোগ করিস না। বিয়াইত্তা পোলাপাইন নিয়ে আমি চলতে পারুম না। ও চলে গেল। তিন চারদিন হয়ে গেলো কোনো খবর নাই ওর। মনে মনে ভাবলাম, থাক, বিয়েটা পরেই করি সময় তো আছেই। এখন না হয় বন্ধুদের সঙ্গেই থাকি। ওদের সঙ্গে আরও কয়েকবছর সঙ্গ দিতে দিতে শুনি আমার ওই বন্ধু আর এক-দেড় মাস পর বিয়ে করছে। সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ফোনে ওকে কল করলাম।
- হ্যালো
- কী মামা, কী খবর?
- আমি ভালো কিন্তু তই বলে বিয়ে করতেছিস?
- হ ব্যাটা, এটাইতো বিয়ের সময়। তুই কইরা ফালা।
- ফাজলামি করোছ ব্যাটা, আটকায় যাবি তো?
- শোন মামা এটাই সময়। দেরি করে বিয়া করলে কী হবো জানস?
- কী?
- তোর বাচ্চাকাচ্চা তোরে দাদু ডাকব!!
আমি সেইদিন আসমান থেকে পড়লাম ওর কথা শুনে। দোস্ত ঠিকই ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ে করে ফেললো। বউ সহ আমার সঙ্গে যেদিন দেখা হলো, সেদিন আমার মেজাজ টা আসলেই খারাপ ছিল। আমি বললাম,
- কিরে, খুব মজা তাই না? ভালো।
- হ ব্যাটা।
- তো খুশিতে কী কী করলি?
- হাহাহা, তুই কি কি করতি?
- আমিতো অনেক কিছুই করতাম।
- যেমন?
- যেমন, বিয়ের রাতেই রুমে রেখে খুশিতে সারা এলাকা দৌড় দিয়ে একটা চক্কর খাইতাম।
- তারপর?
- রুমের দরজা লাগাইতাম।
- লাইট অফ করতাম।
- তারপর, তারপর?
- পাঞ্জাবি খুলতাম।
- অন্ধকারে হাতে সাপের মতো একটা পাতলা বেল্ট নিতাম।
- মানে কি, বেল্ট নিতি ক্যান?
- এক দেড় ঘন্টা আন্দাজে বাট্টা পিটাইতাম, ফাটায় ফেলতাম পিটায়ে, ফারা ফারা কইরা ফেলতাম।
- কারে?
- কারে আবার বউরে!!
আমার কথা শেষ না হতেই ওর বউ ওকে নিয়ে দ্রুত চলে গেল। আমি শিউর ছিলাম, ওর বউ সেদিন আমাকে বেশ ভয় পেয়েছিল। এরপর অনেক দিন আমাদের দেখা হয়নি। আবার যখন ওর সঙ্গে বউসহ দেখা হলো।
-কিরে তোরা তো ভালোই আছিস, আমার জন্য একটা বউ খুঁজে দে না।
-তোরটা তুই খুইজা নে, আমরা পারুম না।
-ক্যান, এটা আবার ক্যমন কথা?
-তোর যেই হালায় বিয়ে দিব, ওই হালাই তো জেল খাটব।
-ক্যান?
-তুই বিয়ার রাতে বউ পিটাইবি, আধমরা করবি আর সকালে তোর বউ নারী নির্যাতন মামলা দিয়া সবটিরে জেলে হান্দাইব।
-হা হা হা ও এই ল্যইগাই তোরা মেয়ে দেখছ না? কাউরে দেখাইলেও খুব একটা খুশি হছ্ না।
-না খুশি হই না, যখন ভাবি তুই ওই মেয়েটারে মারবি। তোর বউরে দেখলে আমার খুব মায়া লাগব, মামা।
-তাহলে শোন, মাইরের পর কি করতাম।
-না না থাক, আর কইছ না, শুনতেও ভয় লাগে। আমার বউ ওই দিন সারা রাত আমারে নিয়ে খুব ভয়ে ছিল। ঘুমায় নাই, হাতে মোবাইল ফোন নিয়া বইসা ছিল। অনেক কষ্টে ভয় কাটাইছি।
-ভয় কাইটা যাবে শোন, এরপর লাইট জ্বালাইতাম, বউটাকে বিছানার সামনে আনতাম। খাটের সামনে দুই পা দুলায়া আমার বরাবর বসতাম, পা দুটো জড়িয়ে ধরতাম, খুব জোরে জোরে কান্না করতাম আর বলতাম।
-কী বলতি?
-কত কত রাত তোমার অপেক্ষায় কাটিয়েছি, কত কত মানুষ আমাকে কষ্ট দিয়ে চলে গেছে, কত কত প্রশ্ন আমাকে বোবা বানিয়েছে। আসলে তো আসলে, এত দেরি করে আসলে কেন?
-যত্তসব ঢং তোর।
-না মামা, সত্যিই
-ফাউল।

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখ করো না, বাঁচো !

এক টুকরো আকাশ !