আমার প্রথম বিদেশ ভ্রমণ ছিল ইতালিতে।
এইজন্য এই দেশটার প্রতি আমার অন্য রকম দূর্বলতা কাজ করে।
তবে ইতালির প্রতি আমার সম্পূর্ণ অন্য একটা কারণে ভয়ংকর ভাল লাগা কাজ করে। একবার আরিজ্জোর কোনো এক গ্রামে আমি গিয়েছিলাম। গ্রামের নামটা সঠিক মনে নেই। সেই গ্রামের এক কবি ছিলেন। তার নাম নাতালিয়া ল্যান্ড্রা।
ভীষণ বুড়ি এক মহিলা। খুব সম্ভবত তিনিই পৃথিবীর একমাত্র কবি, যার কোনো কবিতা কোথাও ছাপা হয়নি।
গুগলে সার্চ দিয়ে এই কবিকে আপনি পাবেন না। অন্তত আমি পাইনি এখনো।
একদিন সেই মহিলা ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে তার কবিতা অনুবাদ করে আমাকে শোনান। কবিতা আমাকে তেমন টানে না। খুবই অনাগ্রহ নিয়ে কবিতা শোনা শুরু করি। তারপর একসময় আবিষ্কার করি, আমার গোটা শরীর কাঁপছে। এত অসামান্য কবিতা মানুষ লিখে কি করে।
একটা মলিন ডায়রীতে তার কবিতা লেখা থাকে। তার কোনো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। সেই ডায়রীর পাতাগুলো আমি ফটোকপি করে দেশে নিয়ে আসি। নিখাদ ইতালিয়ান ভাষায় কবিতাগুলো লেখা। আমি পড়ে কিছুই বুঝি না। তবু সেই অবোধ্য কবিতা পড়ে, আমি গভীর আনন্দবোধ করি।
এখন গুগুল ট্রান্সলেটরের যুগ। মাঝে মাঝে আমি লেখাগুলো সেই ট্রান্সলেটরে অনুবাদ করি। ভাসা ভাসা আবছা একটা ধারণা পাই, কি লিখতে তিনি চেয়েছিলেন।
আজ তারই একটা কবিতা গুগুল ট্রান্সলেটরে অনুবাদ করলাম। কবিতার নাম ব্রেকআপ। এর সঠিক বাংলা প্রতিশব্দ আমার জানা নেই। খুব সম্ভবত বিচ্ছেদ হবে। যাই হোক, কবিতাটি দারুন মজার ... এত হাহাকারময় কবিতা আমি খুব কম পড়েছি ...
ব্রেকআপ
আমার মৃত্যু হবে কোনো এক নির্জন শহরতলীতে
মধ্যরাত্রিতে আমি অচেনা, অদেখা কোনো রাস্তায় মরে পড়ে থাকবো।
আমি মরে পড়ে থাকবো, কেউ আমাকে দেখবে না।
কেউ জানবে না আমি মরে গেছি।
না, না, না, ভুল বললাম।
আমার মৃত্যু হবে কোনো এক ব্যস্ত শহরে
ভর দুপুরে আমি চেনা শহরের বিখ্যাত রাস্তায় মরে পড়ে থাকবো।
আমি মরে পড়ে থাকবো, কেউ আমাকে দেখবে না।
কেউ জানবে না আমি মরে গেছি।
না, না, না, ভুল বললাম।
আমার কোনো মৃত্যুই হবে না।
আমি বেঁচে থাকবো তোমাদের মধ্যে
তোমাদের আড্ডায়, তোমাদের কাজে
আমি বেঁচে থাকবো, কেউ আমাকে দেখবে না
কেউ জানবে না আমি বেঁচে আছি।
কেউ জানবে না আমি বেঁচে আছি।
কেউ জানবে না আমি বেঁচে আছি।
কেউ জানবে না, আমি বেঁচে ছিলাম।

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখ করো না, বাঁচো !

এক টুকরো আকাশ !