পর্ব: ১০

ফিদার মেজাজ খারাপ, সৌমিনের দাতের ফাঁকে যে ৫ টাকার কয়েনটা দিয়েছিল, খিচুনির চোটে সৌমিন সেটা গিলে ফেলেছে.. 
সৌমিনের এই রোগ নতুন না..বেশি ভয় পেলে অথবা নার্ভাস হয়ে গেলে এটা হয়..এইতো সেইদিন ফার্স্ট ইয়ারের ইভা আর আমার সাথে রিক্সায় করে টিএসসি যাচ্ছিল..আমি ওই দুইজনের মধ্যে একটা প্রেম করানোর চেষ্টা করছিলাম, মেয়েটাও মনে হয় সৌমিনের দিকে একটু কান্নি খাওয়া ছিল.. 
সৌমিন রিক্সার উপরে, নিচে ইভা আর পাশে আমি..বাংলা একাডেমী যেতে না যেতেই ওর খিচুনি শুরু..শেষে রিক্সা থামিয়ে ফুটপাতে শোয়াতে হল..কোন মানে হয়? 
এই রিক্সা ঘটনার পর ইভা আর কোনদিন সৌমিনের সামনে আসেনি..কারন জিজ্ঞেস করলে শুধু বলে "আপনার বন্ধুরে জিজ্ঞেস করেন, কেন আসি না"..আর সৌমিনকে জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলে না.. 
ফিদা আবার এই ঘটনায় বেশ মজা পায়, ৩ সেকেন্ডের মধ্যে নিজের গন্ধওয়ালা মোজা সৌমিনের নাকের সামনে ধরে রাখে..এতে কেমন যেন কাজও হয়..আর তাইতো হলের সবাই বলে ফিদার মোজার গন্ধে মরা মানুষও নাকি উঠে দৌড় দিবে আর ভাল মানুষ ফিট হয়ে যাবে.. 
এই গভীর রাতে হাইওয়ের পাশে ছোট খাট জটলা পাকিয়ে বসে আছি আমরা ৫ জন..পাশ দিয়ে অনেক্ষন পর পর একটা করে বাস বা ট্রাক যায়..পিচ ঢালা রাস্তাটা যেন বরফ হয়ে গেছে..মিনিট খানেক বসলেই পশ্চাদদেশ অসার হয়ে যায়..একটু আগুন হলে ভাল হতো.. 
আমরা তাকিয়ে আছি ড্রাইভারের মুখের দিকে, কিভাবে কি হল জানার জন্য..বেশ খানিক্ষন চুপচাপ থাকার পর মুখ খুলল, 
"এক্সিডেনে মরছে, টেরাক চালাইতো, পরথমে সেঞ্জিরে মারছে, হের পর মারছে বাস..এস্পডে শ্যাষ..চেহারা চিনন যায় না, লাইসেন দেইখা ঠিকানা পাইছি..আমার বাড়ি ইশ্বরদী, হের বাড়িও ইশ্বরদী, আমারে ধইরা বাইন্দা ভেজালডা ধরাইয়া দিল..অহন এই ভেজাল একবার ডাইনে চাপ দেয় আরেকবার বামে চাপ দেয়..পুরা গাড়ি আমার ১০০ টন ভার হইয়া গেছে".. 
ঘটনা শুনে সবাই চুপচাপ..শীতের রাতে একটা লাশ নিয়ে বসে আছি..ড্রাইভার অন্যমনস্ক হয়ে সিগারেট ফুকছে, সৌমিন নিজের পেট টিপে টিপে গিলে ফেলা ৫ টাকার কয়েনটা খুজছে.. 
হঠাৎ ফিদা তিরিং করে দাড়িয়ে গেল.. তারপর বলল, 
"ওস্তাদ ওঠেন, চলেন সবাই মিলা আপনার ভেজালটা দেখে আসি" 

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখ করো না, বাঁচো !

এক টুকরো আকাশ !