পর্ব: ১৫

মানুষ হলাম তিন জন আর বিছানা দুইটা..এমন তো কথা ছিল না..ব্যাটা দেখল যে আমরা তিন জন, অথচ রুম দিল দুইজনের.. 
নিচে গেলাম ম্যানেজারের খোঁজে, কোথায় কি? কেউ নাই..রুমের টাকা পকেটে ভরে লাপাত্তা হয়ে গেছে..কি আর করা, দুই বেডেই শুতে হবে তিন জনকে.. 
টানা বারান্দার একপাশে ৪-৫ টা রুম..নিচের তলায় রুম কম, রুমের জায়গায় টয়লেট আছে..দেখে মনে হয় ১০০ বছরের পুরানো বিল্ডিং..স্যাতস্যাতে বাড়িটার হলদে রংটা কোথাও কোথাও শ্যাওলা জমে সবুজ হয়ে গেছে.. 
আমাদের রুমটাও বেশ ছোট..মাঝে তিন বিঘত জায়গা ছেড়ে দিয়ে বসানো দুইটা কাঠের খাট..বসলেই সামনে পিছনে দুলে দুলে মচমচ ক্যাচক্যাচ শব্দ করে..ফিদার ভাষায়, এগুলা ডান্সিং বিছানা, কেউ না বসলেও নাকি এভাবেই দুলতে থাকে.. 
রুমের পেছনের দিকটায় ২ ফুট বাই ৩ ফুট সাইজের জানালা..লোহার ছিটকানি দিয়ে আটকানো..দুই পাটি কাঠের টুকরার এখানে সেখানে ভেংগে গেছে..লম্বা করে লাগানো লোহার শিকগুলোও জং ধরে ক্ষয় হয়ে গেছে.. 
রুমে ঢোকার পর থেকেই সৌমিন ওই জানালার দিকেই তাকিয়ে আছে..খানিকটা ভয় আমারো লাগছে, মনে হচ্ছে কেউ যেন তাকিয়ে আছে জানালার ভাংগা টা দিয়ে..সৌমিনের এই অবস্থা দেখে ফিদাও মজা পেয়ে গেছে, ওকে ভয় দেখানোর জন্য দুই তিন বার জানালাটা খোলার ভান করলো.. 
শেষে দোয়া দুরুদ পড়ে বুকে ফু দিয়ে শুয়ে পড়লাম ডান্সিং বিছানায়..আমি আর সৌমিন দুই ভীতু চাপাচাপি করে এক বিছানায়..অন্যটায় আমাদের বীরপুরুষ বন্ধু ফিদা.. 
রাত কয়টা হবে বলতে পারব না..চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার, ইলেক্ট্রিসিটি সেই যে গেছে আর আসে নাই..হঠাৎ হৈ চৈ শব্দে ধরমরিয়ে উঠে গেলাম..পাশের রুম থেকেই আসছে ধ্বস্তাধস্তি আর শব্দটা.. 
হঠাৎ শুনি আমার নাম ধরেও কে যেন ডাকছে, সৌমিনকে তুলে ফিদাকে ডাক দিয়ে ছুটে গেলাম রুমের বাইরে, আমি শিউর এটা কোন জ্বীনের কাজ..রুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় আসতেই পাশের রুম থেকে ছিটকে বেরিয়ে এল একজন..তার মুখে রিয়াজ রিয়াজ ডাক শুনেই বুঝলাম এটা ফিদা.. 
বেচারা টয়লেট সারতে নিচে গিয়েছিল, ফিরে এসে ভুলে পাশের রুমে ঢুকে পরে..আর তাতেই বাধে বিপত্তি..পাশের রুমের মাতালটা ফিদাকে ম্যানেজারের পাঠানো নাইট কুইন ভেবে জড়িয়ে ধরে..আর ধরেছে তো ধরেছেই.. 
ফিদা মাতাল কে ভাবে জ্বীন, আর মাতাল ফিদাকে ভাবে নাইট কুইন, ব্যাস সবার রাতের ঘুম হারাম.. 
পরদিন সকালে কাছের এক রেস্টুরেন্টে বসে, 
রিয়াজ: নে দোস্ত, নাস্তা খা 
ফিদা: না রে, গলা দিয়া কিছুই নামবে না 
সৌমিন: আরে কি এমন হয়েছে? না হয় একটু..হি হি হি 
ফিদা: রিয়াজ, তুই কিছু বলবি ওরে? 
রিয়াজ: সৌমিন, তুই কিন্তু এখন আমার হাতে মাইর খাবি 
ফিদা: তুই আমাকে ১০০ টাকা ধার দিতে পারবি? 
রিয়াজ: তা পারব 
পকেট থেকে বের করে ১০০ টাকা দিলাম ফিদার হাতে..জিজ্ঞেস করলাম, 
-কি করবি টাকা দিয়ে? 
-একটা ছুরি কিনব, ওই মাতাল শালাকে খুন করব..আজকেই 
বলেই ফিদা চোখের পলকে হোটেল থেকে বের হয়ে গেল.. 

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখ করো না, বাঁচো !

এক টুকরো আকাশ !