পর্ব: ১৭

ফিদা: আরো দশ টাকার জলপাই এর আচার দেন 
রিয়াজ: আর আচার খাইস না, পুরা ১০০ টাকাই আচায় খেয়ে শেষ করবি? 
ফিদা: তুই শুধু টাকাটাই দেখলি, আমার মনের ভেতরের উথাল পাতাল ঢেউটা দেখলি না 
সৌমিন: এহ, তোর যেই না একটা মন, তার আবার উথাল পাতাল ঢেউ..হাহ 
রিয়াজ: ফিদা, তারচে চল ভাত খাই, খুধা লাগছে 
ফিদা: না রে দোস্ত, এখান থেকে এক চুলও নড়া যাবে না, যদি পাখি উড়ে যায়? 
সৌমিন: আরে কিছু হবে না, আমি আছি না? 
রিয়াজ: আমি আছি না মানে কি? আমি আছি না মানে কি? আমরা খেতে যাব আর তুই দাড়ায় থাকবি? 
সৌমিন: বন্ধুর জন্য এইটুকু করতে পারব না? তোরা আমাকে কি ভাবিস? 
ফিদা: তোরে আমি মিচকা শয়তান ভাবি, তুই হইলি দুনিয়ার একমাত্র মোটা লোক, যে কি না শয়তান 
ফিদা মেয়েদুটোর পেছন পেছন হাটতে হাটতে গার্লস স্কুলের গেটে সেই যে দাড়িয়েছে তো দাড়িয়েছে..মেয়েদুটোও দুষ্টু কম না, একটু পর পর পেছনে তাকিয়ে ফিদাকে দেখে আর মুচকি হাসে..হ্যামিলনের বাশীওয়ালার মত মেয়েদুটো আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে..তারপর থেকে ফিদা একটার পর একটা আচার খেয়েই যাচ্ছে আর তাকিয়ে আছে স্কুলের গেটের দিকে.. 
ফিদাকে নিয়ে এটাই সমস্যা..কোন মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলেই হল..ওর প্রেম হয়ে যায়.. 
এইতো সেদিন জুলজি ডিপার্টমেন্টের এক মেয়ের প্রেমে পরে সারাদিন ফজলুল হক হলের পুকুর পাড়ে বসে থাকত, শুধু একনজর মেয়েটাকে দেখার জন্য..পুকুরে গোছল, পুকুর পাড়েই খাওয়া দাওয়া.. 
ব্যাপারটা চোখ এড়ালো না জুলজি ডিপার্টমেন্টের ছেলেদের..ফলে যা হবার তাই হল..এক দুপুরে বেচারা পুকুরে গোছল করে উঠে দেখে তার শার্ট প্যান্ট হাওয়া হয়ে গেছে, আর ঘাট জুড়ে ছেলেমেয়েরা দাড়িয়ে আছে ফিদার পানি থেকে ওঠার অপেক্ষায়..কেউ কেউ মোবাইল ফোন নিয়ে রেডী ভিডিও করার জন্য..পুরাই বেইজ্জতি.. 
সৌমিন: ফিদা তুই যা, খেয়ে আয়, আমি তো আছিই..তোর এই ভালবাসা বৃথা যেতে দিব না.. 
রিয়াজ: সৌমিন ঠিকই বলছে, তোর গ্যাস্ট্রিক, এখনই তো পেট ব্যাথায় কো কো করছিস 
ফিদা: যদি এর মধ্যে মেয়েটা বের হয়ে যায়? 
সৌমিন: তাহলে, তুই তোর নাম আর ফোন নাম্বার দিয়ে একটা চিঠি লিখে দিয়ে যা, আমি মেয়েটাকে দিয়ে দিব 
রিয়াজ: এতোদিনে মোটু একটা ভাল বুদ্ধি দিছিস 
ফিদা চটপট একটা চিঠি লিখে সৌমিনের হাতে দিয়ে খাবার হোটেলের দিকে হাটা দিল..আমিও ছুটলাম ওর পিছনে..সৌমিনের ক্ষুধা নাই আজ..আমিও বেশি সাধলাম না, এমনিতেই টাকা পয়সায় টানা টানি.. 
বেশ অনেকক্ষন হয়ে গেল সৌমিন একা একা দাড়িয়ে..ওর ভালই লাগছে, বন্ধুর জন্য কিছু একটা তো করতে পারছে..পেটে ক্ষুধা নিয়েও স্কুলের গেটে দাড়িয়ে আছে স্রেফ বন্ধুত্বের খাতিরে.. 
তার খুব ইচ্ছে করতেছে ফিদার লেখা চিঠিটা পড়তে, কি লিখছে? সৌমিন জীবনেও প্রেম পত্র লিখে নাই..আচ্ছা একবার দেখলে কি হয়? বুক পকেট থেকে বের করে পড়া শুরু করল ফিদার প্রেমপত্র, 
"ভাবতেই ভাললাগে আমি তোর প্রেমে পড়ি 
ভাবতেই ভাললাগে তোকে ভেংগেচুরে গড়ি 
আদরে আদরে তোর কপালেতে চুমে বলি 
কোথায় ছিলিরে মোর ডানা কাটা নীল পরি 
তোমারই ফিদা 
ফোন: ০১৯xxxxxx২২" 
কবিতাটা পড়েই হুহু করে উঠল সৌমিনের বুকটা..আহা, এমন করে যদি সেও কবিতা লিখে কোন মেয়েকে দিতে পারত. 
স্কুলের ঘন্টা পড়ে গেছে..মেয়েরা বের হয়ে আসছে..ওই তো সকালে দেখা মেয়েটা..গেট দিয়ে বের হয়েই এদিক ওদিক কি যেন খুঁজছে..ফিদার দিকে চোখাচুখি হতেই মুচকি একটা হাসি দিয়ে আস্তে আস্তে হাটা শুরু করল..ফিদা এইসব ইংগিত বেশ ভালই বোঝে..দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল মেয়েটার দিকে, একবার তার হাতে চিঠিটা দিতে পারলেই কেল্লা ফতে..তারপর যা কথা বলার সেটা মোবাইলেই বলবে.. 
এবার মেয়েটার ঠিক পেছনে ফিদা..এখনি পাশ কাটিয়ে যাবার সময়ই দিতে হবে চিঠিটা..প্যান্ট 
ের পকেট থেকে কাপা হাতে বের করে সেটা..এগিয়ে দিল মেয়েটার দিকে.. 
হায়রে, ফিদা যদি জানত, চিঠিটাতে ফিদার নামের জায়গায় সৌমিন তার নাম আর ফোন নাম্বার লিখে দিয়েছে.. 

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখ করো না, বাঁচো !

এক টুকরো আকাশ !