পর্ব: ০৮
ফিদা: ব্যাটা একটা নোংরা
সৌমিন: কি? জোরে বল, শুনিনা
ফিদা: বললাম, শালা একটা নোংরা
সৌমিন: কে? রিয়াজ?
ফিদা: তোর মাথা, ড্রাইভারের কথা বলি
সৌমিন: কি করছে তোরে?
ফিদা: ব্যাটার লুংগিটার গন্ধটা একটু শুইকা দেখ
সৌমিন: তুই শুক
ফিদা: আমি শিউর, শালা গত বছর লাস্ট গোছল করছে
সৌমিন: হে হে
ফিদা: এই লুংগিতে যেই পরিমান ধুলা বালি আছে, ওইটা টবে দিয়া বোম্বাই মরিচের গাছ লাগাইতে পারবি
শীতের রাতে এই খোলা ট্রাকে চড়াটা যে একদমই ঠিক হয়নি তা যতই রাত বাড়ছে, ততই অনুধাবন করছি..ড্রাইভার আর হেল্পারের দেয়া লুংগি গামছা দিয়ে কোন রকমে মুখ মাথা ঢেকে বসে আছি..বার বার মনে হচ্ছে হল থেকে কেন যে কম্বলটা নিয়ে আসলাম না..
ড্রাইভার ট্রাকটাকে নিয়ে ভিডিও গেম খেলছে..একবার রাস্তার এইপাশে তো একটু পর ওই পাশে..আর শুনশান রাস্তায় একটু পর পর হর্ন দেয়..প্রথম প্রথম মিনিটে অন্তত একবার বাজাতো, তারপর মিনিটে দুই আর এখন প্রতি ১০ সেকেন্ডে একবার করে হর্ন বাজায়..হর্নের সাথে সাথে ফিদার মুখ থেকে অদ্ভুদ অদ্ভুদ সব খিস্তি বের হচ্ছে..সাথে তাল দেয়ার জন্য সৌমিন তো আছেই..
"বাহ, তোর এই গালিটা ভাল হইছে".."উহু, আগেরটা জোস ছিল".."আর ভাল কিছু নাই স্টকে?"
ট্রাকে থাকা খাটিয়াটার একদিকের দড়ি খুলে গেছে..ট্রাকের সাথে সাথে ওটাও এদিক ওদিক করছে..কখন যে গায়ের উপর উঠে আসে কে জানে..
সৌমিন সবচে বেশি কাহিল হয়ে গেছে..নাদুস নুদুস শরীরটা শীতে কুকড়ে গেছে..আহা বেচারা, এত কষ্ট কি আগে করেছে কখনো? ঢাকায় বাবার বাড়ি আর মায়ের আহ্লাদ ফেলে আমাদের জন্য হলে থাকে..হলের পাতলা ডাল কি যে আয়েস করে খায়..ওর মা মাঝে মাঝে খাওয়া দাওয়া নিয়ে হলে আসে..আমাদের ওইদিন ঈদ..আমরা পেট ফাটিয়ে খাই আর আন্টি নিরবে চোখের পানি ফেলেন..
আসলে সব দোষ আমারই..শুধু শুধু ছেলেটাকে এই কষ্টের মধ্যে ফেললাম..কি হতো পরীক্ষাটা দিলে? না হয় ফেলই করতাম..কিন্তু এই শীতে তো কষ্ট করতে হতো না.. সৌমিনটার জন্য মায়ায় চোখে পানি চলে আসছে..
গভীর আবেগ নিয়ে তাকালাম মোটুটার দিকে..ভাবলাম ওকে একটু চিয়ার আপ করি..দেখি সে মোবাইল বের করে কাকে যেন ম্যাসেজ লিখছে...জিজ্ঞেস করলাম,
-কিরে, কারে ম্যাসেজ দেস? গার্লফ্রেন্ড টার্লফ্রেন্ড না তো?
-আরে, নাহ, ওইটা তোদের ডিপার্টমেন্ট, এই দুনিয়ায় মোটা ছেলেদের সাথে কেউ প্রেম করে না..
আবেগে আমার গলা ধরে এলো,
-আরে কি বলিস এইসব?
-ঠিকই বলি রে
-তো লুকিয়ে লুকিয়ে কাকে মেসেজ পাঠাচ্ছিস?
-জুয়েল ভাইকে
-কাকে?
-জুয়েল ভাইকে, এসএমএস করে বলেছি যদি এখনো রওনা না দেয়, তাহলে যেন আমার রুম থেকে কম্বলটা নিয়ে আসে..
রাগে দুঃখে আমার চোখে পানি চলে আসল..নীলা আসলে ঠিকই বলে যে আমার দুইটা বন্ধুই আসলে একেকটা গাধা..লো কোয়ালিটি গাধা..
Comments
Post a Comment