বিচিত্র স্বপ্ন

কয়েক দিন আগে আমি একটা বিচিত্র স্বপ্ন দেখলাম। স্বপ্নটা কেবল বিচিত্র নয়, খানিকটা হৃদয় বিদারকও।
স্বপ্নটার কথা বলি। চারিদিকে ভীষণ বরফ পড়েছে। রোদেলা আমাকে বরফের নিচে চাপা দিয়েছে। আমার পুরো শরীর বাইরে আর মাথা বরফের নিচে। রোদেলা আরও চাপ চাপ বরফ দিয়ে আমাকে ঠেসে ধরছে। রোদেলার পাশে আরেকটি নারী দাঁড়ানো। সঙ্গত কারণে তার পরিচয় দিলাম না। তিনি রোদেলাকে বলছে, রোদেলা, তোমার আরও বরফ লাগবে? ফ্রিজ থেকে এনে দেবো?
চারিদিকে এত বরফ থাকার পরও- কেন ফ্রিজ থেকে আরও বরফ এনে আমাকে চাপা দিতে হবে, এই কষ্টে আমি ঘুমের মধ্যেই কেঁদে ফেলি। ফলত: স্বপ্নের এই পর্যায়ে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম ভাঙার পর দেখি, রোদেলাকে ছবি আমার ফোনে জ্বলজ্বল করছে
আমার বাসার রাস্তা ঘাটের মতো এর জোছনাও বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। সেই জ্যোছনার খানিকটা অংশ এসে পড়েছে রোদেলার মুখের উপর। তাকে লাগছে অপ্সরীর মতো। দেখে মোটেও মনে হচ্ছে না, একটু আগে সে এই ভয়ংকর কান্ড ঘটিয়েছে।
পরদিন ডাক্তারের সাথে রেগুলার এপয়েন্টমেন্ট ছিলো। বলবো না, বলবো না করেও ডাক্তারকে স্বপ্নটার কথা বলে ফেললাম। ডাক্তার কফি খাচ্ছিলেন। আমার স্বপ্নের কথা শুনে উনার গলায় কফি আটকে গেলো। উনি কাশতে শুরু করলেন। সেই কাশি থামানোর জন্য উনি পানি খেতে গিয়ে আরেক কান্ড বাঁধিয়ে বসলেন। পানি উনার নাকে মুখে উঠে দম আটকে এক ভয়ংকর কান্ড। ডাক্তারদের হাতে রোগী মরার খবর আমরা প্রায়ই শুনি। এই প্রথম, রোগীর হাতে ডাক্তার মরার একটা ইতিহাস তৈরির দ্বারপ্রান্ত থেকে আমি অল্পের জন্য ফিরে এলাম।
সেদিন সন্ধ্যায় যথারীতি আড্ডা দিচ্ছি। আড্ডায় এই স্বপ্নটার কথা খুব মজা করে বললাম। আমি ভেবেছিলাম, এই স্বপ্নটার কথা শুনে বন্ধুরা মজা পাবে, আর রোদেলা খেপে যাবে। ব্যাপারটা সে রকম হলো না। বরং এক ভাবী অত্যন্ত আক্ষেপ নিয়ে বললেন, ওমা, কী মিষ্টি স্বপ্ন। তোমার ভাই কোনোদিন আমাকে নিয়ে এই রকম স্বপ্ন দেখলো না। আপসোস।
আড্ডা শেষে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি, এমন সময় রোদেলাকে ডাক পরেছে মুঠো ফোনে, ফোনটা ধরতেই বরফ গলায় বললো, তোমার সাথে আমার কথা আছে।
- কী কথা?
-ওই স্বপ্নটার ব্যাপারে। 
- আরে ধুর, বাদ দাও। 
- না বাদ দেবো না। তুমি আমাকে বলো?
- কী বলবো?
রোদেলার গলার স্বর হিমাংকের ১৫ ডিগ্রি নিচে নিয়ে বললো, ওই মেয়েটা কে ছিলো, যে আমার পাশে দাঁড়িয়ে তোমাকে বরফ চাপা দিচ্ছিলো?
এবার আমার দম সত্যি সত্যি বন্ধ হয়ে এলো। বললাম, এসব তুমি কি বলছো রোদেলা?
রোদেলা হিস হিস করে বললো, তুমি আমার , আমি আগুনে পুড়াই, কী বরফ চাপা দিই, এটা আমার ব্যাপার। সে কেন দেবে? তার কেউ নাই? দরকার হলে সে তার নিজের কাউকে বরফে চাপুক।
আমি দ্রুত রোদেলার সাথে একমত হই। আসলেই, সেই নারীর উচিত দ্রুত তার পছন্দের মানুষকে বরফে চাপা দেয়া। দরকার হলে আমি নিজে হেল্প করবো।
অতিরিক্ত কথা কাজ বিপদ ডেকে আনে। শেষের বাক্য বলাটাই ভুল হয়েছে। রোদেলা দ্রুত চোখ গোল করে বললো, তার পছন্দের মানুষকে বরফ চাপা দেয়ার ব্যাপারে তোমার এত উৎসাহ কেন? কে সে? তুমি তার নাম বলছো না কেন?
কয়েক দিন হলো- প্রচুর ঠান্ডা বরফ পড়েছে। বরফ যে কবে গলবে। হায় গ্রীষ্ম, তুমি এত দূরে কেন?

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখ করো না, বাঁচো !

এক টুকরো আকাশ !